গরমে যেভাবে সুস্থ থাকবেন
* গরমে বাইরে যখন বের হবেন তখন ব্যাগে এক বোতল পানি রাখুন।
* ঠান্ডা পানির জন্য থার্মোফ্ল্যাস্ক রাখুন। ওরস্যালাইনও গুলিয়ে রেখে দিতে পারেন।
* ছাতা বা ক্যাপ রাখুন।
* পাতলা কাপড়ের রুমাল ও ভেজা টিস্যু।
* বডি স্প্রে
গরমটা এখন অসহনীয়ই বটে। এখন উপায় কী? গ্রীষ্মকে তো আর এ মুহূর্তেই বিদায় করা যাচ্ছে না। এমন গরম থাকবে আরও বেশ কিছুদিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও তাই বলছে। প্রচণ্ড গরমে সবকিছুই বিরক্তিকর। গায়ের কাপড় ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে যায়। চুল হয় আঠালো। মুখে ব্রণ দেখা দেয়। আর এসবের মধ্যে হাজির হয় নানা অসুখ-বিসুখ। তাই গরমে জীবনযাপন কেমন হলে আরাম পাবেন জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
পোশাকে আরাম – দেখে আসুন
গরমে সুতি কাপড়ের জুড়ি নেই। মেয়েরা যেকোনো হালকা রঙের সুতি কাপড় পরতে পারেন। ফুলেল, চেক বা বলপ্রিন্টের কাপড় খুব চলছে এখন। গজ কাপড় কিনে ঢিলেঢালা কামিজ বা কুর্তা বানিয়ে নিতে পারেন। আর এখন এমনিতেও একটু ঢিলেঢালা পোশাকের চল চলছে। ডিজাইনার লিপি খন্দকারের মতে, এ সময় ভারী কাজের পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত। বাদ দিন ‘শকিং’ বা গাঢ় রং। পালাজ্জো, পাটিয়ালি কিংবা ধুতি পায়জামা এ সময় আরাম দেবে। গেঞ্জি কাপড়ের টপ গরমের জন্য ভালো। তিনি বলেন, ‘সুতি শাড়ির সঙ্গে একটু বৈচিত্র্যময় ব্লাউজ বেছে নিলে তা দুপুরের দাওয়াতে অনায়াসে পরা যাবে। রাতের জমকালো অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেন রেশম বা একেবারে পাতলা কাতান শাড়ি পরে। গরমে অনুষঙ্গও খুব হালকা-পাতলা হওয়া চাই।’ এবার আসা যাক ছেলেদের কথায়। নিত্যদিনের জন্য টি-শার্ট অথবা ফতুয়া স্বস্তি দেবে। দাওয়াতে একেবারে মিহি সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবিতে আরাম পাবেন। খুব বেশি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান না হলে পাঞ্জাবি মানিয়ে যাবে সবখানেই।
গরমেও সতেজএই সময়ে ত্বকের যে সমস্যাটি বেশি দেখা যায় তা হলো রোদে পুড়ে যাওয়া বা সানবার্ন। বাইরে যাওয়ার ২০ মিনিট আগে মুখ ও গলায় সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে। এরপর সামান্য পাউডার মুখে লাগিয়ে নিলে মুখ আর তেলতেলে দেখাবে না। রোদে বের হলে ছেলেমেয়ে সবারই এসপিএফ (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) ১৫ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। তবে তৈলাক্ত ত্বকে এটি ব্যবহারে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোদ থেকে ত্বক বাঁচাতে ছাতা ব্যবহার করুন। ছেলেরা ক্যাপ পরে বের হোন। বাইরে থেকে এসে টমেটোর রস বা তরমুজের রস মুখে ঘষলে রোদে পোড়া ভাব দূর হয়। এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন আয়ুর্বেদ রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। তিনি বরফের বাক্সে তরমুজের রস ভরে তা ঠান্ডায় জমিয়ে রাখার বুদ্ধি দিলেন। বাইরে থেকে এসে মুখ ধুয়েই এটি মুখে ঘষা যাবে। ভালো ক্লেনজারের কাজও করবে এটি। সব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। একটু পরপর মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। ঘেমে গেলে ত্বকের লোমকূপ খুলে যায়, এতে সহজেই ময়লা আটকে গিয়ে ব্রণ দেখা দেয়। তৈলাক্ত ভাব ও ব্রণ থেকে বাঁচতে এ সময় ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করে এমন সব প্রসাধনী ব্যবহার করুন।
গরমে চুল প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে হবে। তেল দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে ধুয়ে ফেলতে পারলে ভালো। ঘেমে, ময়লা জমে অনেক সময় মাথার ত্বকে গোটার মতো দেখা দেয়। ত্বক ভালো রাখতে এ সময় সপ্তাহে কয়েক দিন নিমপাতাসহ সেদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। গোসল শেষ করার আগে চার-পাঁচ মগ নিমপাতা সেদ্ধ পানি গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিলেই চলবে।
সাজসজ্জাগ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড গরমে কেমন মেকআপ হওয়া উচিত? প্রশ্ন করা হয়েছিল মেকআপশিল্পী বাপন রহমানের কাছে। রোজকার জন্য কাজল, মাসকারা, ম্যাট লিপস্টিক আর কমপ্যাক্ট পাউডারে কাজ সেরে ফেলতে বললেন তিনি। জানিয়েছেন, এই সময় পানিরোধক সব প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। লিপস্টিক, আইশ্যাডো সবকিছু ম্যাট ও হালকা রঙের হতে হবে। মেকআপের আগে ত্বকের ধরন জেনে নিন। ত্বক বুঝে প্রসাধনী বাছাই করুন।
মুখে পাউডার লাগানোর আগে মুখ ধুয়ে নিন। এবার এক টুকরা বরফ পুরো মুখ আর গলায় ঘষে নিন। এতে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবে, ঘাম কম হবে। এবার একটি তুলার বলে অ্যাসট্রিজেন্ট Astringent ভিজিয়ে মুখে-ঘাড়ে বুলিয়ে নিতে পারেন। এটি তেল নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর ম্যাট ফাউন্ডেশন বা কমপ্যাক্ট পাউডার হালকা করে লাগিয়ে নিন। প্রয়োজন না হলে ফাউন্ডেশন দেওয়ার দরকার নেই। এ সময় মেকআপের জন্য মিনারেল কমপ্যাক্ট পাউডার ভালো কাজ দেবে। চুল উঁচু করে বেঁধে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মুখে পাউডার লাগানোর আগে মুখ ধুয়ে নিন। এবার এক টুকরা বরফ পুরো মুখ আর গলায় ঘষে নিন। এতে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবে, ঘাম কম হবে। এবার একটি তুলার বলে অ্যাসট্রিজেন্ট Astringent ভিজিয়ে মুখে-ঘাড়ে বুলিয়ে নিতে পারেন। এটি তেল নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর ম্যাট ফাউন্ডেশন বা কমপ্যাক্ট পাউডার হালকা করে লাগিয়ে নিন। প্রয়োজন না হলে ফাউন্ডেশন দেওয়ার দরকার নেই। এ সময় মেকআপের জন্য মিনারেল কমপ্যাক্ট পাউডার ভালো কাজ দেবে। চুল উঁচু করে বেঁধে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
গরমে খাবারদাবাররান্নাবিদ সিতারা ফিরদৌস বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় খাবার খাওয়ার প্রতি সচেতন হলে সব সময় সুস্থ থাকা যায়।’ এই সময় কোন খাবারগুলো খাওয়া ঠিক, কোনগুলো ঠিক নয়, তা জানতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। টাটকা শরবত, ডাব, শসা, মাঠা, বাঙ্গি, লাচ্ছি, পুদিনাযুক্ত খাবার পেট ঠান্ডা রাখবে। পেট ঠান্ডা রাখবে বেলের শরবতও। আখের শরবত জোগাড় করতে না পারলে আখের গুড় গুলিয়ে শরবত পান করতে পারেন। সবজির মধ্যে ঝিঙে, ধুন্দল, লাউ, উচ্ছে, পাটশাক, শজনে ডাঁটা বেশি পরিমাণে খাবেন। গরু, খাসি খেলে গরমে অস্থির লাগে। শিং, মাগুর, শোল মাছ ও মুরগি খেতে পারেন। রান্নায় কম মসলা দিন। ভাজাপোড়া খাওয়া বাদ দিন। দই-চিড়া, কর্ন ফ্লেকস বা ওটস খেতে পারেন। বাইরে থেকে এসেই ঠান্ডা কিছু খেয়ে বসবেন না। বিশ্রাম না নিয়ে ঠান্ডা খাবার খেলে সর্দি লেগে যাবে। আইস টি বা কোল্ড কফিতেও আরাম পাবেন।
গরমে যেভাবে সুস্থ থাকবেন
দরকার না হলে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। রোদে বের হলে অবশ্যই ছাতা, টুপি, গা ঢাকার জন্য পাতলা কাপড় সঙ্গে রাখতে বলেন তিনি। সূর্যের তাপ সরাসরি ত্বকে না লাগালে ভালো। দীর্ঘক্ষণ রোদে বা গরমে না থাকার চেষ্টা করতে হবে। এ সময় শরীর প্রচুর ঘামে। তাই শরীর থেকে পানি ও সোডিয়াম বের হয়ে যায়। এই ঘাটতি পূরণ করতে রোজ ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। পানি ও শরবতে লবণ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। পানিতে স্যালাইন বা গ্লুকোজ মিশিয়ে নিতে পারলে ভালো। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা গ্লুকোজ আর সাধারণ স্যালাইন অবশ্যই এড়িয়ে যাবেন। পানিবাহিত রোগের প্রকোপ এ সময় অনেক বেড়ে যায়। রাস্তার ধারের পানীয় একেবারেই পান করা যাবে না। বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। বডি স্প্রে সরাসরি ত্বকে না লাগিয়ে পোশাকের ওপর লাগানো ভালো। ডিওডরেন্টের বিকল্প হিসেবে ফিটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে। অস্বস্তি বোধ হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে দিনে দুবার গোসল করুন।
0 comments :